জাল কাগজপত্র তৈরি করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার অভিযোগে হাইকোর্টের নির্দেশে নাটোরের জেলা ও দায়রা জজ সোমবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে চাঞ্চল্যকর রুপালী হত্যা মামলার দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারী করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, সিংড়া থানার রুপালী হত্যা মামলার প্রধান আসামি মো.শাহমিম (২৭) ও মো. রমিজান আলম (২৩) এর পক্ষে তাঁর আইনজীবী মনছুর রহমান সরকার গতবছর ১৪ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল এর দ্বৈত বেঞ্চে জামিনের আবেদন করেন। এ সময় তিনি তিন আসামির ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জাবেদা নকল উপস্থাপন করেন।
এছাড়াও জেলা জজ আদালতের আদেশ ও অন্যান্য কাগজপত্র ভিন্নভাবে লিখে হাইকোর্টে দাখিল করেন। জনৈক মো.শাহ আলম (২৬) কে মামলার প্রধান আসামি দেখানো হয়। যদিও এই মামলায় মো.শাহ আলম নামের কোনো আসামি নাই। মামলার মোট আসামি সংখ্যা দুইজন। উচ্চ আদালত দাখিলি কাগজপত্র আপাত দৃষ্টিতে সঠিক বিবেচনা করে গত বছর ১৪ নভেম্বর আসামি মো.শাহমিম ও মো.রমিজান আলমকে ছয় মাসের জন্য জামিন দেন।
আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে আসলে মামলার বাদি লালমনিরহাট জেলার মোস্তফি গ্রামের ইব্রাহিম খলিলের ছেলে মো.আব্দুর রাজ্জাক বিষ্মিত হন। তিনি হাইকোর্টে আসামিদের দাখিলি কাগজপত্র উঠিয়ে জানতে পারেন আসামিদের দাখিল করা কাগজপত্র জাল। মিথ্যা বর্ণনা সম্বলিত কাগজপত্র দিয়ে আদালতের কাছ থেকে জামিনের সুবিধা লাভ করেছে।
বিষয়টি তিনি হাইকোর্টের ওই বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো.বাসির উল্লাহকে জানান। তিনি ঘটনাটি আদালতের নজরে নিয়ে আসলে আদালত আসামিদের আইনজীবীকে এ ব্যাপারে কারণ দর্শাতে বলেন এবং নাটোরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতকে আসামিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করার নির্দেশনা দেন। আসামিদের আইনজীবী নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে অব্যাহতি চান এবং এ ঘটনার জন্য আসামিদের এক তদ্বীরকারককে দায়ী করেন। দাখিলি কাগজপত্রের ব্যাপারে তাঁর ব্যাক্তিগত ধারণা ছিল না বলে তিনি আদালতকে জানান।
এদিকে সোমবার (২৩ এপ্রিল) এই মামলাটির ধার্য্য তারিখ ছিল। কিন্তু জামিন পাওয়া আসামিরা আদালতে উপস্থিত হননি। তাঁদের আইনজীবী লোকমান হোসেন বাদল তাঁদের পক্ষে সময়ের দরখাস্ত দেননি। আদালত সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। আগামি ৩০ এপ্রিল পরবর্তী দিন ধার্য্য করেন।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মাসুদ হাসান জানান, আসামিরা প্রতারণার মাধ্যমে কাগজপত্র জাল করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছিলেন। ঘটনাটি হাইকোর্টে প্রমাণিত হওয়ার পর তাদের জামিন বাতিল করা হয় এবং নাটোরের বিচারিক আদালতকে আসামিদের গ্রেপ্তারের পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। সে মোতাবেক আদালতের বিচারক মো.রেজাউল করিম আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারীর নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ধার্য্য তারিখে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য রাখা হয়েছে। পরে শুনানী শেষে রায় ঘোষণা করা হবে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলার মোস্তফি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে রেজেনা পারভিন ওরফে রুপালী ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর বগুড়া থেকে নিখোঁজ হন। তিন দিন পর নাটোরের সিংড়া উপজেলার রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নের দোপুকুরিয়া গ্রামের একটি আবাদি জমিতে রুপালীর আগুণে ঝলসানো লাশ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে মেয়েটির বাবা বাদি হয়ে সিংড়া থানায় তাঁর মেয়ের স্বামি মো.শাহমিমসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। তদন্তকালে গ্রেপ্তার হওয়া আসামি মো.শাহমিম ও রমিজুল আলম দোষস্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তদন্ত শেষে থানার উপ পরিদর্শক দেবব্রত দাস ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ তারিখে উক্ত দুই আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গ্রেপ্তারের পর থেকে আসামিরা জেল হাজতে আটক ছিলেন। পরে জালিয়াতি করে জামিনে মুক্ত হয়ে আদালতে হাজিরা দিয়ে আসছিলেন। সর্বশেষ গতকাল তাঁরা পলাতক হন। ইতোমধ্যে মামলার প্রায় সব সাক্ষি সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।

Comments
Post a Comment