নাটোরের উত্তরা গণভবন সংলগ্ন এলাকায় জঙ্গি আস্তানা; বোমাসহ ৪ জঙ্গি আটক॥




নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর
নাটোরের দিঘাপতিয়া এলাকার দুবাই প্রবাসির বাড়ি থেকে চার জঙ্গীকে আটক করেছে পুলিশ। বাড়িটি ঘিরে রাখার তিন ঘন্টার পর অভিযান শেষে তাদেরকে আটক করা হয়। এসময় ৫টি ককটেল, ৪টি চাপাতি, জিহাদী বই, সালফার সহ বেশ কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। আর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য
বাড়ির মালিকের ভাই রফিক সিকদার কে ডিবি পুলিশের হোফজতে নেয়া হয়েছে। সোমবার মধ্যরাত থেকেই দীঘাপতিয়া এলাকায় উত্তরা গণভবনের পাশের ওই বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়। পরে মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের আত্নসর্মপণ করতে বলা হয়। এর কিছুণ পরই গুলির শব্দ শোনা যায়। বাড়িটি ল্যক্ষ করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে পুলিশ। ভেতরে থাকা এক জঙ্গি আত্নসমর্পণ করার পর বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে পুলিশ।
আটককৃতরা হচ্ছে, সিংড়া উপজেলার আরকান্দি পশ্চিমপাড়া গ্রামের ইউনুস আলী মিয়ার ছেলে আনিসুর রহমান ওরফে আনিস (৪০), বাগাতিপাড়া উপজেলার চাপাপুকুর গ্রামের মৃত শুকুর আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪২), একই এলাকার মৃত ভিকু মন্ডলের ছেলে ফজলুর রহমান ওরফে ফজলু (৩৮) এবং নলডাঙ্গা উপজেলার খোলাবাড়িয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের ফোজলার রহমান এর ছেলে জাকির হোসেন ওরফে জাকির মাস্টার (৩৮)।
আজ মঙ্গলবার সকাল সাতটায় উত্তরা গণভবনের পাশে চক ফুলবাড়ি এলাকার ওই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন নাটোরের পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার। তিনি জানান, পুলিশ দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় বাড়িটি ঘিরে ফেলে। এ সময় মাইকে বাড়ির ভেতরের বাসিন্দাদের বের হয়ে আসতে বলা হয়। বের হয়ে না এলে পুলিশ শটগান দিয়ে গুলি ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে প্রথমে একজন আত্নসমর্পণ করে, পরে তার মাধ্যমে যোগাযোগ করলে আরও তিনজন বেরিয়ে আসে। পুলিশ তাৎণিকভাবে তাদের আটক করে সদর থানায় নিয়ে যায়।
নাটোরের পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার জানান, বেশ কিছু জঙ্গী একটি বাড়িতে অবস্থান নিয়ে গোপন বৈঠক করছে এমন সংবাদে দিঘাপতিয়া এলাকার দুবাই প্রবাসি ইকবাল সিকদারের বাড়িটি গতরাত ৩টার থেকে ঘিরে রাখে পুলিশ। এসময় জঙ্গীদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ তাদের আত্মসমর্পনের জন্য বারবার আহবান জানান। কিন্তু পুলিশের আহবানে কোন ভাবেই সাড়া দিচ্ছিলনা তারা। পরে ফজর নামাজ পর এক  জঙ্গী সদস্য পুলিশের আহবানে সাড়া দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আরো তিনজনকে আটক করা হয়। এসময় বাড়িটিতে তল্লাশি চালিয়ে ৫টি ককটেল, চারটি চা পাতি, বেশ কিছু জিহাদী বই, কিছু পরিমানের সালফার, একটি ল্যাপটপ, চারটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
মঙ্গলবার সকাল পৌনে ছয়টার দিকে অভিযান শুরু হয়। এ সময় ভিতরে থাকা জঙ্গী সদস্যদের বাহিরে এসে আত্মসমর্পনের আহবান জানান পুলিশ প্রশাসন। তখন পুলিশের হাত মাইক ব্যবহার করে সকলকে সতর্ক করা হয়।
সকালে বাড়িটি তল্লাশি করে একটি ল্যাপটপ, পাঁচটি মুঠোফোন, একটি মডেম, পাঁচটি সিম ও সিডি, তিনটি ধারালো অস্ত্র, পাঁচটি ককটেল, কিছু পেট্রোলসহ একটি জারেকিন, কিছু কাচের বোতল ও ফসফরাস জব্দ করা হয়। একটি ঘরে বেশ কিছু ভিজিটিং কার্ড, বইপত্র পাওয়া যায়। পুলিশ সুপার দাবি করেন, বাড়িটি জঙ্গি বসবাসের উপযোগী একটি বাড়ি। এর চারদিকে উঁচু দেয়াল, ভেতরে অন্ধকার। বাড়িতে খাট, চৌকি নেই।
বাড়িটির পাশের এক বাসিন্দা জানান, সেখানে দিঘাপতিয়ার একজন ছাত্র থাকতেন। তিনি স্কাউট সদস্য ছিলেন। বাড়ির এক কক্ষ থেকে তার নাম লেখা একটি টিনের বাস্ক পাওয়া গেছে। বাড়ির মালিক ইকবাল সিকদার দুবাই থাকেন। বাড়িটি দেখাশোনা করেন তাঁর চাচাতো ভাই রফিক শিকদার। বাড়িটি দুবাই প্রবাসি ইকবাল সিকদারের হলেও তার ভাই রফিক সিকদার দেখাশুনা করতেন। মাস খানেক আগে রফিক সিকদারের কাছ থেকে বাড়িটি ভাড়া নেয় দিঘাপতিয়া এ মকে কলেজের শিার্থী আমির হামজা। এরপর থেকেই বাড়িটিতে দু-একজন মানুষের যাতায়াত ছিল। বেশির ভাগ সময় বাড়িটির গেট বন্ধ থাকতো। তবে আমির হামজাকে আটক করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ সুপার আরো জানান, দেশের বিভিন্ন জেলার জঙ্গী আস্তানার যে রকম বাড়ি, এখানেও সে বাড়িটি একই রকমের। বাড়িটির তিনটি কক্ষ থাকলেও একটি কক্ষে মাত্র লাইট ছিল। আর সেখানে জঙ্গীরা অবস্থান নিয়েছিলো। তবে নাটোরে তাদের নাশকতার কোন পরিকল্পনা ছিল কিনা সে বিষয়ে বিস্তারিত জঙ্গীদের সাথে কথা বলে জানা যাবে। তবে আটককৃতদের নামে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
অভিযানে পুলিশ সুপার বিপ্লব  বিজয় তালুকদারের নেতৃত্বে মুল অভিযান পরিচালনা করেন, গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল হাই। এ সময় নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম, হেডকোয়াটার ফায়জুল ইসলাম, নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান সহ ডিবি পুলিশের একটি বিশেষ দল এই অভিযানে অংশগ্রহন করে।

Comments