নাটোরে প্রাইভেট পড়ানো নিয়ে শিক্ষকদের বিরোধে মার খেল ছাত্র॥



নিজস্ব প্রতিবেদক, সিংড়া॥
প্রাইভেট পড়ানোকে কেন্দ্র করে রাজু প্রামানিক নামে নাটোরের সিংড়া উপজেলার জয়নগর তাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রকে বেধরক মারপিটের প্রতিবাদে প্রধান শিক্ষকসহ অভিযুক্ত তিন শিক্ষকের অপসারণ দাবী করেছে শিক্ষার্থী সহ এলাকাবাসী। ওই  দাবিতে বুধবার সকাল থেকে দুপুর অবধি স্কুল এলাকায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সহ এলাকাবাসী। স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুলের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের স্কুলে প্রবেশে বন্ধ করেছে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারী বুধবার স্কুলে উপস্থিত ছিলেননা। তবে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি খবির উদ্দিন সরদার স্কুলে উপস্থিত ছিলেন। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা হুঁিশয়ারী করেছে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকসহ তিনজনকে অপসারন না করা পর্যন্ত তারা ক্লাস বর্জন অব্যাহত রাখবে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ওই স্কুলের সাবেক এক বিএসসি শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়াকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দুপুরে দশম শ্রেণির ছাত্র রাজু প্রামানিকের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্কুলের অফিস সহকারী মোস্তফা সিদ্দিক। পরে এর জের ধরে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মোহসিন আলী এবং প্যাটান বহির্ভূত শিক্ষক গুপেন্দ্রনাথ সাহা ওই ছাত্র  রাজুকে ডেকে নিয়ে এলোপাতাড়ি চর-থাপ্পর, পা দিয়ে লাথি ও এক পর্যায়ে বেত্রাঘাত করে গুরুতর আহত করে। পরে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। এই ঘটনার পরই বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মঙ্গলবার ওই তিন শিক্ষককে স্কুলের ভেতর প্রায় ৩ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে স্থানীয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সহ এলাকার বিশিষ্টজনরা স্কুলে গিয়ে দোষীদের বিচারের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। বুধবার সকাল থেকে প্রধান শিক্ষক মোহসিন আলী ও প্যাটান বহির্ভূত শিক্ষক গুপেন্দ্রনাথ সাহা এবং অফিস সহকারী মোস্তফা সিদ্দিকের অপসারণ দাবিতে অত্র প্রতিষ্ঠানের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা।
বুধবার সকাল ১১টায় স্কুলে সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অভিযুক্ত তিন শিক্ষকের অপসারণ দাবিতে শত শত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিক্ষোভ মিছিল করছে। এসময় স্কুলের প্রধান ফটকে তালা ঝুলতে দেখা যায়।  অবশ্য পরে সাংবাদিকদের দেখে ফটকের ছোট গেটের তালা খুলে দেয়া হয়। আর অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারীকে স্কুলে পাওয়া যায়নি।
স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী উর্মি খাতুন, ৬ষ্ঠ শ্রেণির সোনালী খাতুন, সুবর্ণা, আশা খাতুন, পুজা রাণীসহ বিক্ষোভরত শিক্ষার্থরা জানায়, অত্র প্রতিষ্ঠানে কোন বিএসসি শিক্ষক না থাকায় ওই বিদ্যালয়ের বরখাস্তকৃত এক বিএসসি শিক্ষকের কাছে তারা প্রাইভেট পড়েন। স্কুলের বহিরাগত শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ার কারণে প্রায় তাদেরকে বিনা কারণে হুমকি ও মারপিট করা হয়। তারা অভিযুক্ত তিন শিক্ষকের অপসারণ দাবি করেন।
আহত ছাত্রের অভিভাবক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্কুলের বাহিরের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ার কারণে গত এক মাস ধরে ওই তিন শিক্ষক ছাত্রদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলো। স্কুলের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়। বিনা কারণে তার ছেলেকে বেধরক মারপিট করা হয়েছে। পা দিয়ে খুঁচিয়ে লাথি মেরে তার ছেলের ওপর নির্যাতন করা হয়। পশুকেও এভাবে কেউ নির্যাতন করেনা।
প্রধান শিক্ষক মোহসিন আলীর সাথে সেল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ক্লাসে ফোন ব্যবহার করার কারণে তাকে শুধু তিন-চারটি চর-থাপ্পর দেয়া হয়েছে। লেখা পড়ার ব্যাপারে কোন মারধর বা নির্যাতন করা হয়নি। 
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি খবির উদ্দিন সরদার জানান, বিষয়টি সুরাহার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা স্কুলের কোন ক্ষতি না করে এজন্য গেটে তালা দিয়ে রাখা হয়। এছাড়া অনেক শিক্ষাথী ক্লাসে করছিল। তবে প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতির কারন তিনি জানেন না বলে জানান।
সিংড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার এক শিক্ষার্থীকে মারপিটের ঘটনা শুনেছেন। স্থানীয় ভাবে বুধবার সেটি মীমাংসার কথা রয়েছে। এরপর আর তিনি কিছুই জানেন না। তবে ফটকে তালা ঝুলিয়ে রাখা সহ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিক্ষোভ বা মানববন্ধন করার খবর তার জানা নেই।
সিংড়া থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ থানায় আসেনি।

Comments